ঢাকা | বঙ্গাব্দ

কমিশনের একপেশে সুপারিশ জাতির ওপরে চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে : মির্জা ফখরুল

  • নিউজ প্রকাশের তারিখ : Oct 30, 2025 ইং
মির্জা ফখরুল ছবির ক্যাপশন: মির্জা ফখরুল
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেছেন, ঐকমত্য কমিশনের প্রস্তাব ও সুপারিশ একপেশে এবং তা জবরদস্তিমূলকভাবে জাতির ওপরে চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এমনটি বলেন।

মির্জা ফখরুল লিখিত বক্তব্যে বলেন, গত ১৭ অক্টোবর জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় এক ঐতিহাসিক অনুষ্ঠানে আমরা জুলাই সনদের অঙ্গীকারনামায় সই করি। সেদিন জুলাই জাতীয় সনদ এর চূড়ান্ত কপি আমাদের সামনে উপস্থাপন করা হয়নি। প্রিন্টেড পুস্তক হিসেবে জুলাই জাতীয় সনদের কপি আমরা হাতে পাওয়ার পর আমাদের দৃষ্টিগোচর হয়েছে যে, ঐকমত্যের ভিত্তিতে সম্মত কয়েকটি দফা আমাদের অগোচরে পুনরায় সংশোধন করা হয়েছে । 

তিনি বলেন, জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫ এর বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া সম্পর্কে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশ ২৮ অক্টোবর সরকারের কাছে পেশ করা হয়েছে।  চিঠিতে বলা হয়েছে, জুলাই জাতীয় সনদে সন্নিবেশিত সংবিধান সংশোধন সংক্রান্ত বিষয়গুলো কার্যকর করার উদ্দেশ্যে সরকার "জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশ ২০২৫" শিরোনামে একটি আদেশ জারি করবে। এরুপ প্রস্তাবিত আদেশের একটি খসড়া সংযোজিত করা হয়েছে। সরকারের  এরকম আদেশ জারি করার এখতিয়ার নাই। সংবিধানের ১৫২ নম্বর সংজ্ঞা অনুসারে "আদেশ" আইনের মর্যাদাপ্রাপ্ত, অতএব সেটি জারি করা রাষ্ট্রপতির এখতিয়ার।

বিকল্প প্রস্তাব ১-এ সরকার জুলাই সনদ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে একটি পূর্ণাঙ্গ খসড়া বিল গণভোটে উপস্থাপন করা হবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। বিলের তফসিল-১ এ সংস্কার প্রস্তাবসমূহ সন্নিবেশিত করা হয়েছে।  বলা হয়েছে বিল সরকারি গেজেটে প্রকাশ করা হবে। বিলে উল্লেখ করা হয়েছে যে, সংবিধান সংশ্লিষ্ট তফসিল-১ এ বর্ণিত ৪৮ টি দফার (জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের প্রস্তাবিত দফাগুলি) ওপর গণভোট হবে।'

বিএনপি মহাসচিব বলেন, এসব দফার বিপরীতে স্বাক্ষরিত জুলাই জাতীয় সনদে অন্তর্ভুক্ত রাজনৈতিক দলসমুহের মতামত, ভিন্নমত, নোট অব ডিসেন্ট উল্লেখ করা হয়নি। অর্থাৎ ঐকমত্য কমিশনের প্রস্তাব ও সুপারিশ একপেশে এবং তা জবরদস্তিমূলকভাবে জাতির ওপরে চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। তাহলে এটিই প্রতীয়মান হয় যে, দীর্ঘ প্রায় এক বছরব্যাপী সংস্কার কমিশন ও জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর দীর্ঘ ধারাবাহিক আলোচনা ছিল অর্থহীন, অর্থ ও সময়ের অপচয়, প্রহসনমূলক এবং জাতির সঙ্গে প্রতারণা।

প্রশ্ন হলো, নির্বাচন কমিশন সাংবিধানিকভাবে জাতীয় সংসদ এবং রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের জন্য ক্ষমতাপ্রাপ্ত; সংবিধান সংস্কার পরিষদ গঠনের লক্ষ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের দায়িত্বপ্রাপ্ত নয়। ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর আলোচনায় সংবিধান সংস্কার পরিষদ গঠনের বিষয়টি এজেন্ডাভুক্ত ছিলনা, আলোচনার জন্য উপস্থাপিত হয়নি, সংবিধান সংস্কার পরিষদ গঠনের বিষয়ে  কোন ঐকমত্য হওয়ার অবকাশও ছিল না।  উল্লেখ্য এ জাতীয় কোন সংবিধান সংস্কার পরিষদ গঠন করতে হলে তাও পরবর্তী জাতীয় সংসদে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।'

তিনি বলেন, গণতন্ত্রে রাজনৈতিক দলগুলোর ভিন্নমত থাকবে এটাই স্বাভাবিক এবং সে কারণে সংলাপের প্রয়োজন দেখা দিয়েছিল। কিন্তু ঐকমত্য কমিশন ভিন্নমত পোষণে রাজনৈতিক দলগুলোর গণতান্ত্রিক অধিকারকে আমলেই নেয়নি। বাস্তবায়ন আদেশে বলা হয়েছে, জাতীয় সংসদের সাধারণ নির্বাচনে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে জাতীয় সংসদ গঠিত হওয়ার পাশাপাশি একই সঙ্গে একটি "সংবিধান সংস্কার পরিষদ" গঠিত হবে। এবং তারা আলাদাভাবে সংসদ সদস্য এবং সংবিধান সংস্কার পরিষদ সদস্য হিসেবে শপথ নিবেন। অর্থাৎ নির্বাচিত জাতীয় সংসদটি একই সঙ্গে "সংবিধান সংস্কার পরিষদ" হিসেবে অভিহিত হবে।

বলা হয়েছে, সংবিধান সংস্কার পরিষদ প্রথম অধিবেশন শুরুর তারিখ থেকে ২৭০ পঞ্জিকা দিবসের মধ্যে যদি সংস্কার সম্পন্ন করতে ব্যর্থ হয়, তাহলে গণভোটে অনুমোদিত সংবিধান সংস্কার বিলটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত হবে, যা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও হাস্যকর। জাতীয় সংসদে অনুমোদনের পর যেকোনো বিল রাষ্ট্রপতির অনুমোদনপ্রাপ্তির পরই কেবল আইনে পরিণত হয়। স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার কোনো সুযোগ নেই এবং তা গণতান্ত্রিক রীতি ও সংসদীয় সার্বভৌমত্বের পরিপন্থী।'

তিনি আরও বলেন, 'বলা হয়েছে উক্ত বাস্তবায়ন আদেশ অনুসারে অনুষ্ঠিত গণভোটে যদি ইতিবাচক সম্মতি পাওয়া যায় তাহলে সংবিধান সংস্কার বিলটি সংবিধান সংস্কার পরিষদ তার দায়িত্ব পালনে সহায়ক হিসেবে বিবেচনা করবে। জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোট অনুষ্ঠান হওয়ার আগেই এ ধরনের প্রি-এমটিভ পদক্ষেপ আদৌ গ্রহণযোগ্য নয়।

মির্জা ফখরুল বলেন, বিকল্প-২ প্রস্তাবে জুলাই সনদ আদেশের বিষয়টি বিল আকারে না দিয়ে সংবিধান সংস্কার সম্পর্কিত প্রস্তাবসমূহ সরাসরি গণভোটে উপস্থাপন করা হবে মর্মে উল্লেখ করা হয়েছে। এক্ষেত্রেও ঐকমত্য কমিশনের আলোচনাকালে বিভিন্ন বিষয়ে রাজনৈতিকদলসমুহ কর্তৃক প্রদত্ত মতামত, ভিন্নমত ও নোট অব ডিসেন্ট গণভোটে উপস্থাপনের সুযোগ রাখা হয়নি। 


তিনি বলেন, ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথমার্ধে নির্বাচন অনুষ্ঠানের ঘোষণা দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা। সেক্ষেত্রে নির্বাচন অনুষ্ঠানের আগে প্রস্তাবিত গণভোট অনুষ্ঠান সম্ভব নয়। সময় স্বল্পতা ও নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য বিপুল অঙ্কের ব্যয় এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ ব্যাপক লোকবল নিয়োগ এবং একটি জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের মত বিশাল আয়োজনের বিবেচনায় নির্বাচনের আগে গণভোট অনুষ্ঠান অপ্রয়োজনীয়, অযৌক্তিক এবং অবিবেচনাপ্রসূত। একই আয়োজনে এবং একই ব্যয়ে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিনই গণভোট অনুষ্ঠান করা বাঞ্ছনীয়।

তিনি আরও বলেন, যে সব বিষয়ে ভিন্নমত বা নোট অব ডিসেন্টসহ দলগুলো ঐকমত্য হয়েছে, তার উল্লেখ না রেখে এবং দীর্ঘ আলোচনায় যেসব প্রসঙ্গ আলোচনায় আসেনি তা অন্তর্ভুক্ত করে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের অন্য সব সুপারিশ  অগ্রহণযোগ্য বিধায় আমরা একমত হতে পারছি না। আমরা অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে লক্ষ্য করছি যে, এসব সুপারিশ কেবল জাতিকে বিভক্ত করবে, ঐক্যের বদলে অনৈক্য সৃষ্টি করবে। মনগড়া যেকোনো সংস্কার প্রস্তাব গ্রহণ করলে জাতীয় জীবনে দীর্ঘমেয়াদে অকল্যাণ ডেকে নিয়ে আসতে পারে। 

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ডক্টর আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, সালাহউদ্দিন আহমদ, হাফিজ উদ্দিন আহমেদ ও সেলিমা রহমান।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেছেন, ঐকমত্য কমিশনের প্রস্তাব ও সুপারিশ একপেশে এবং তা জবরদস্তিমূলকভাবে জাতির ওপরে চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এমনটি বলেন।

নিউজটি আপডেট করেছেন : নারায়ণগঞ্জ আপডেট

কমেন্ট বক্স