ঢাকা | বঙ্গাব্দ

প্রতিদ্বন্দ্বীদের হাতেই যখন বাংলাদেশের ভাগ্য

  • নিউজ প্রকাশের তারিখ : Sep 18, 2025 ইং
বাংলাদেশের ভাগ্য ছবির ক্যাপশন: বাংলাদেশের ভাগ্য
আবুধাবির পার্ক রোটানা হোটেলে ফুল ডেলিভারি দিতে এসেছেন এক পাকিস্তানি ডেলিভারি ম্যান। গেইটে এসে দেখেন যিনি খাবার অর্ডার করেছেন তার নাম তাসকিন আহমেদ। ক্রিকেট ভক্ত ডেলিভারি ম্যান তো অবাক। তার বিস্ময়মাখা হাসি আর থামেই না। আগের রাতেই তাসকিনদের ঝলক দেখেছেন পর্দায়, এখন সামনাসামনি পেয়ে নিজেকে বেশ ভাগ্যবান ভাবছিলেন তিনি।

বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটারদের তখন হোটেল ছাড়ার তোড়জোড়। আবুধাবি থেকে দুবাইগামী টিম বাসে খাবেন বলে কেউ কেউ পছন্দের খাবার অর্ডার করে আনিয়ে নিয়েছেন।

বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা ২০১৮ সাল থেকে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বী। উপমহাদেশে ভারত-পাকিস্তানের পরই এই দুই দলের দ্বৈরথকে রাখেন যেকোনো বিশ্লেষক। বহুজাতিক আসরে দুই দলের লড়াই মানেই উত্তেজনায় ঠাসা ঘটনাবহুল দিন। এবার যদিও এশিয়া কাপে লঙ্কানরা বাংলাদেশকে একপেশে লড়াইয়ে হারিয়েছে। যাদের সঙ্গে খেলার মাঠে চরম দ্বৈরথ, এক ম্যাচের জন্য সেই শ্রীলঙ্কা সমর্থক বনে যাবে বাংলাদেশ দল।

বাংলাদেশ দল যখন টিম বাস ধরবে একই হোটেলে থাকা শ্রীলঙ্কার দলের কিছু সদস্যকেও আশেপাশে দেখা গেল। রাতে অনুশীলনে যাওয়ার আগে আয়েশি সময় পার করছেন তারা। সাবেক অলরাউন্ডার উপল চন্দনা এখন দলটির ফিল্ডিং কোচ। লবিতে তার সঙ্গে বাংলাদেশের কয়েকজন ক্রিকেটারের দেখা হয়ে গেল। হাসি বিনিময় হলো, চন্দনাকে কিছু একটা বলতেও দেখা গেল।

আনুষ্ঠানিক কথায় যদিও তারা কাউকে সমর্থনের কথা স্বীকার করছে না। দুবাই যাত্রার আগে দলের হয়ে কথা বলতে এসে নাসুম আহমেদ যেমন বললেন, 'নির্দিষ্ট ভাবে কাউকে সমর্থন করা বা কারো জন্য দোয়া করা এটা প্রয়োজন আমি মনে করতেছি না। যেইটা লেখা আছে কপালে ওইটাই হবে। কাজেই আমরা এটা নিয়ে এত ভাবছি না। যা হবার তাই হবে।'

নাসুমের মুখের কথা যাই হোক, বাংলাদেশ দল নিশ্চয়ই চাইবে সুপার ফোরে যাওয়ার সহজ সমীকরণটাই মিলে যেতে। শ্রীলঙ্কা আফগানিস্তানকে হারিয়ে দিলেই তো হলো। 

তাহলে আর কোন হিসেব নেই। কিন্তু লঙ্কানরা হারলে ম্যাচের জয়-পরাজয়ের ব্যবধানটা হয়ে যাবে মুখ্য, আর সেই জায়গায় নেট রানরেটে দ্বিতীয় অবস্থান নিশ্চিত করতে লঙ্কানদের কমপক্ষে হারতে হবে বড় ব্যবধানে। ২০ ওভার হবে ধরে নিয়ে যে ক্যালকুলেশন করা হয়েছে তাতে রানের ব্যবধান থাকতে হবে ৬৫, অথবা কমপক্ষে ৫০ বল আগে শেষ হতে হবে ম্যাচ। দুটি টেস্ট খেলুড়ে দলের মধ্যে এমন ফল সচরাচর হয় না।

এক ম্যাচে তিন দলের সমীকরণ থাকায় আবুধাবিতে না থেকেও ভীষণভাবে আছে বাংলাদেশ। শ্রীলঙ্কার তুলনায় আফগানদের পরিস্থিতি আরো কঠিন। লঙ্কানরা তবু কম ব্যবধানে হারলে পার পেয়ে যাবে, আফগানিস্তানের জেতার বিকল্প নেই।

শ্রীলঙ্কা-আফগানিস্তান বৃহস্পতিবার মুখোমুখি হবে আবুধাবিতে, বাংলাদেশ দল দুবাইতে গিয়ে সেই ম্যাচ দেখবেন উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা নিয়ে। তাসকিনরা সম্ভবত শ্রীলঙ্কা দলকে শুভকামনা জানিয়ে পাড়ি জমিয়েছেন দেড়শো কিলোমিটার দূরের শহরে।  ১৯ সেপ্টেম্বর দুবাইতে বাংলাদেশ দল অনুশীলন করবে নাকি দেশের ফ্লাইট ধরবে তা নির্ভর করছে অনেকটা লঙ্কানদের উপর।


বাংলাদেশের কাছে শ্বাসরুদ্ধকর লড়াইয়ে হেরে যাওয়া আফগানিস্তান অনেকটা কোণঠাসা, অথচ টুর্নামেন্টে শুরুতে হংকংকে বিধ্বস্ত করে গ্রুপে সবচেয়ে ফেভারিট মনে হচ্ছিলো তাদেরই। 

এখন তারাও খাদের কিনারে।  অলরাউন্ডার গুলাবদিন নাইব অবশ্য বলছেন তারা এই পরিস্থিতিতে অভ্যস্ত, 'ক্রিকেট সহজ খেলা নয়, এই ধরনের আসলে সব ম্যাচই কঠিন।

 আমাদের দিক থেকে বলব আমরা দ্রুতই ভুল থেকে শিখে যাব। এবং আমরা এই ধরনের পরিস্থিতির সঙ্গে অভ্যস্ত। শ্রীলঙ্কা খুব ভালো দল, তারা দুইটা ম্যাচ জিতেছে। তবে কেবল আমরা নয়, তারাও চাপে থাকবে। প্রতিদিনই কঠিন, সহজ কিছু না। আমার ধারণা এটা দারুণ এক ম্যাচ হবে।'


টি-টোয়েন্টিতে আফগানিস্তানকে বড় কাতারে মাপা হলেও টেস্ট খেলুড়ে দলের বিপক্ষে এখনো দেড়শো রান তাড়া করে জেতেনি তারা। রান তাড়ার এই দুর্বলতা জানেন গুলাবদিন। তবে শেষটায় পরিসংখ্যান নয়, বাঁচা-মরার লড়াই বলেই তেতে উঠার বারুদ পাচ্ছেন তারা, 'আমাদের হাতে একটাই অপশন-জয়। আমরা সর্বোচ্চ নিংড়ে দিয়ে সেই চেষ্টাই করব। আগেও আমরা ভালো ভালো দলকে হারিয়ে নিজেদের প্রমাণ করেছি।'

সমীকরণের মরপ্যাঁচে 'নাগিন নাচ' কেন্দ্রিক বিরোধ আপাতত ইস্তফা রেখে বাংলাদেশের সমর্থকরা যে লঙ্কানদের সমর্থন করবে এই খবর চারিথা আসালাঙ্কারা পেয়েছেন। লঙ্কান এক সাংবাদিক জানালেন এতে নাকি কৌতুকবোধ করছেন তারা। 

সংবাদ সম্মেলনে এসে দাসুন শানাকা অবশ্য বললেন বাংলাদেশের সমর্থনে খুশি তারা, তবে জিততে চান নিজেদের স্বার্থেই, 'বাংলাদেশিরা আমাদের সমর্থন করবে এটা ভালো কথা। কিন্তু আমাদের নিজেদের জন্যই জয় দরকার। আফগানিস্তান খুব ভালো দল, সেরা ক্রিকেট খেলেই তাদের হারাতে হবে।'

যদি শ্রীলঙ্কা আফগানিস্তানকে হারিয়ে দেয় ২০ সেপ্টেম্বর আবার সুপার ফোরে বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কার সম্ভাব্য লড়াই হবে। একদিনের বন্ধুতার পর আবার মুখোমুখি টক্কর। এ যেন টি-টোয়েন্টি ম্যাচের মতই বারবার রঙ বদল।

নিউজটি আপডেট করেছেন : নারায়ণগঞ্জ আপডেট

কমেন্ট বক্স