ঢাকা | বঙ্গাব্দ

ভারতের দক্ষিণে মোদির নতুন ‘মাথাব্যথা’ থালাপতি বিজয়

  • নিউজ প্রকাশের তারিখ : Aug 25, 2025 ইং
ভারতের দক্ষিণে মোদির নতুন ‘মাথাব্যথা ছবির ক্যাপশন: ভারতের দক্ষিণে মোদির নতুন ‘মাথাব্যথা
কোনো নায়কোচিত বেশভূষা নেই—ফুলহাতা সাদা শার্ট, ক্রিম গ্যাভার্ডিং প্যান্ট ও পায়ে স্যান্ডেল। প্রায় ৩০০ ফুট লম্বা র‌্যাম্প ধরে কনসার্টের গায়কদের মতো হেঁটে যান দুই পাশের উচ্ছ্বসিত ভক্তদের মধ্য দিয়ে। তাদের ছুড়ে দেওয়া উত্তরীয় গলায় জড়াচ্ছেন ভালোবাসার প্রতীক হিসেবে। হাত নেড়ে জানাচ্ছেন শুভেচ্ছা। উজ্জীবিত করছেন উজ্জ্বল ভবিষ্যতের বাণী দিয়ে। একবার হাত মেলানোর আশায় ভক্তরা ছুটে যাচ্ছেন সেই উঁচু র‌্যাম্পের দিকে। তাদের আকুলতা বলে দিচ্ছে—তিনিই সত্যিকারের নেতা, তাদের সেনাপতি।

এই সেনাপতি হলেন অভিনেতা থেকে পুরাদস্তুর নেতা বনে যাওয়া দক্ষিণী সুপারস্টার থালাপতি বিজয়। সম্প্রতি তার দলীয় জনসভা জনসমুদ্রে রূপ নেওয়ায় ও সেই জনসভায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি থেকে শুরু করে তামিলনাড়ু রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী এমকে স্ট্যালিন পর্যন্ত সবাইকে 'একহাত' নিয়ে আলোচনার তুঙ্গে এখন থালাপতি।

এই সেনাপতি হলেন অভিনেতা থেকে পুরাদস্তুর নেতা বনে যাওয়া দক্ষিণী সুপারস্টার থালাপতি বিজয়। সম্প্রতি তার দলীয় জনসভা জনসমুদ্রে রূপ নেওয়ায় ও সেই জনসভায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি থেকে শুরু করে তামিলনাড়ু রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী এমকে স্ট্যালিন পর্যন্ত সবাইকে 'একহাত' নিয়ে আলোচনার তুঙ্গে এখন থালাপতি।

'থালাপতি' তার নাম নয়, ভক্তদের ভালোবেসে দেওয়া উপাধি। এর অর্থ সেনাপতি। গত বৃহস্পতিবার তামিলনাড়ুর দক্ষিণে মাদুরাই জেলায় বিশাল জনসভায় জ্বালাময়ী বক্তৃতায়ও সেই উপাধির প্রতি সুবিচার করেছেন তিনি। বিরোধী কাউকে একবিন্দু ছাড় দেননি।

গণমাধ্যম দ্য হিন্দুর প্রতিবেদনে বলা হয়, থালাপতির জনসভায় বসার ব্যবস্থা ছিল অন্তত দেড় লাখ মানুষের। তা ভড়ে যায় সকালেই। অথচ, জনসভা শুরুর সময় ছিল বিকেল ৪টা। পুলিশের বরাত দিয়ে গণমাধ্যমটি জানায়, অন্তত ১ লাখ ৩০ হাজার গাড়ি জনসভা অভিমুখে গিয়েছে। এসব গাড়ি রাখতে ৫০০ একর জায়গা বরাদ্দ ছিল।

শুরুতেই নিজেকে বনের রাজা সিংহের সঙ্গে তুলনা করে বিজয় বলেন, 'সিংহ সব সময়ই সিংহ। জঙ্গলে অনেক শিয়ালসহ অন্যান্য প্রাণীও থাকে, কিন্তু সিংহ থাকে মাত্র একটি। সিংহই জঙ্গলের রাজা। সিংহ জানে কী করে টিকে থাকতে হয়।'

রূপালি পর্দায় মৃদুভাষী, ঠান্ডা মেজাজের অ্যাকশন হিরোর এমন আক্রমণাত্মক ভাষণ সবাইকে যেমন স্তম্ভিত করেছে, তেমনি তার সমর্থকদের মনোবল করেছে আকাশ ছোঁয়া চাঙ্গা।

বিজয় তার ভাষণে কেন্দ্রীয় সরকারের উদ্দেশে বলেন, ভারতের শাসনক্ষমতায় থাকা বিজেপি-নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স (এনডিএ) সরকার 'তামিলনাড়ুর জন্য একেবারে কিছুই করেনি'।

নিজের ভাষণে থালাপতি তার 'রাজনৈতিক শত্রু' ডিএমকে দলের প্রধান ও তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী এমকে স্ট্যালিনের উদ্দেশে বলেন, 'গত চার বছরের জননীতি নির্ধারণ ও দুঃশাসন সম্পর্কে আমরা যখন প্রশ্ন করি, তখন কোনো জবাব থাকে না। যদি বিন্দুমাত্র বিবেক থাকে, আমাদের প্রশ্নের জবাব দিন। আপনি যে শাসন ব্যবস্থা চালাচ্ছেন, সেখানে কি সততা আছে? ন্যায়বিচার আছে? দুর্নীতি কি নেই? নারীদের নিরাপত্তা আছে? জনসাধারণের নিরাপত্তা আছে?'

বিজেপিকে একমাত্র 'আদর্শিক শত্রু' ও ডিএমকে-কে 'রাজনৈতিক শত্রু' হিসেবে উল্লেখ করে থালাপতি বলেন, 'আমাদের টিভিকে (তামিলাগা ভেট্রি কাড়াগম) এমন দল না, যারা কাউকে ভয় পায়। নারীশক্তি আমাদের সঙ্গে, যুবশক্তি আমাদের সঙ্গে পুরো তামিলনাড়ুর শক্তি আমাদের সঙ্গে আছে।'

নিজের বক্তব্যে বিজেপিকে 'ফ্যাসিবাদী' ও ক্ষমতাসীন ডিএমকে-কে 'বিষাক্ত' বলে আখ্যা দেন থালাপতি।
মোদির প্রতি তার প্রশ্ন, 'আপনি কি সব মানুষের ভালোর জন্য ক্ষমতায় এসেছেন, নাকি আমাদের মুসলিম বন্ধুদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করতে এসেছেন?'

মোদির নাগরিকত্ব সংশোধন আইনেরও কট্টর বিরোধী থালাপতি বিজয়। তার মতে এই 'অগ্রহণযোগ্য' আইন জাতির সামাজিক ও ধর্মীয় সম্প্রীতি নষ্ট করবে।

২০২৬ সালে তামিলনাড়ুর বিধানসভা নির্বাচনে টিভিকে কোনো জোটের সঙ্গে যাচ্ছেন না। একাই লড়বে। সেই লড়াইয়ের দামামা যেন থালাপতি বাজালেন মাদুরাইয়ের জনসভায়।

সবমিলিয়ে তামিলনাড়ুর রাজনীতিতে বড় পরিবর্তন আসতে যাচ্ছে। সেটা হয়তো বড় দলগুলোর কপালে চিন্তার ভাঁজ আরও গভীর করবে—বিশেষ করে বিজেপির। তবে শর্ত—থালাপতি বিজয়ের এই হুংকার আর জনসমুদ্রের স্রোতে কোনো ভাটা পড়া যাবে না এবং ব্যালটেও থাকতে হবে অনুরূপ ছাপ!

নিউজটি আপডেট করেছেন : নারায়ণগঞ্জ আপডেট

কমেন্ট বক্স